ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের খাদ্যাভ্যাস এবং পছন্দের তালিকায় নানা পরিবর্তন আসে। শরতে যদি মিষ্টি কুমড়োর মসলাদার স্বাদের কদর থাকে, তবে বছর শেষের এই সময়টায়, বিশেষ করে শীতের শুরুতে জিভ খোঁজে ভিন্ন কিছু। চকলেট, কেক বা নোনতা স্ন্যাক্সের ভিড়েও যে স্বাদটি এই সময়ে আলাদা করে নজর কাড়ে, তা হলো পিপারমিন্ট বা আমাদের অতি পরিচিত পুদিনা। সুপারশপে পিপারমিন্ট ফ্লেভারের আইসক্রিম বা ক্যান্ডির দেখা মেলা মানেই যেন ছুটির মেজাজ শুরু। এই স্বাদটি কেবল জিভেই জল আনে না, বরং এক ধরনের নস্টালজিয়া বা পুরোনো দিনের স্মৃতিও জাগিয়ে তোলে।
পুদিনার প্রজাতি ও বাহ্যিক রূপ পুদিনা বা মিন্ট পরিবারের উদ্ভিদের সঙ্গে বাগানের এক অদৃশ্য সখ্য রয়েছে। টবে বা বাগানে সামান্য যত্নেই এই গাছটি সব সময়ই নিজেকে জানান দেয় এবং নিয়মিত পরিচর্যা দাবি করে। পুদিনার নানা প্রজাতির মধ্যে ‘স্পিয়ারমিন্ট’ ও ‘পিপারমিন্ট’ই বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে জনপ্রিয়। বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ পিপারমিন্ট (M. piperita officinalis) দেখতে সাধারণ পুদিনার চেয়ে কিছুটা ভিন্ন। এর পাতাগুলো তুলনামূলক গাঢ় সবুজ এবং ডিম্বাকৃতি হয়ে থাকে। গাছের কাণ্ডে হালকা বেগুনি আভা লক্ষ্য করা যায় এবং এর পাতার স্বাদ ও গন্ধ অন্যান্য প্রজাতির চেয়ে অনেক বেশি ঝাঁঝালো বা তীব্র হয়।
নামকরণ ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যায়, সপ্তদশ শতকের ইংল্যান্ডে পিপারমিন্টের প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের ধারণা, স্পিয়ারমিন্ট ও ওয়াটারমিন্টের প্রাকৃতিকভাবে সংকরায়নের ফলেই এই নতুন জাতের জন্ম। এর নামকরণের পেছনেও রয়েছে মজার তথ্য। গোলমরিচের (Pepper) মতো তীব্র ঝাঁঝালো স্বাদের কারণে নামের প্রথমাংস এবং গ্রিক পুরাণের মোহময়ী অপ্সরা ‘মিন্থ’-এর নামানুসারে এর নাম হয়েছে পিপারমিন্ট। এই ইতিহাস ও মিথলজি গাছটিকে দিয়েছে এক আভিজাত্যের ছোঁয়া।
তেল নিষ্কাশন ও রান্নাঘরে ব্যবহার বাণিজ্যিকভাবে পুদিনা গাছ থেকে বাষ্পীয় পাতন বা স্টিম ডিস্টিলেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পিপারমিন্ট অয়েল বা তেল সংগ্রহ করা হয়। এটি অত্যন্ত ঘন একটি উপাদান, যা বিভিন্ন ফ্লেভারিং এবং অ্যারোমা পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। তবে রান্নাঘরে আমরা সচরাচর যা ব্যবহার করি, তা হলো ‘পিপারমিন্ট এক্সট্র্যাক্ট’। এটি মূলত সেই ঘন তেলেরই একটি লঘু সংস্করণ। অ্যালকোহল বা পানির সঙ্গে মিশিয়ে এর তীব্রতা কিছুটা কমিয়ে আনা হয়, যাতে বেকিং বা রান্নার সময় গন্ধটা খুব বেশি কড়া না হয়ে যায় এবং ব্যবহার করতে সুবিধা হয়। অভিজ্ঞরা পরামর্শ দেন, যেকোনো এসেন্স বা নির্যাসের মতো এটিও মুখ ভালোভাবে আটকে তাপ ও আলোর উৎস থেকে দূরে সংরক্ষণ করা উচিত।